বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সদ্য বিদায়ী ইউএনও সালেহীন তানভীর গাজী ——

আজকের কুমিল্লা ডট কম :
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৮
news-image

মো. দেলোয়ার হোসেন, নবীনগর:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সদ্য বিদায়ী ইউএনও সালেহীন তানভীর গাজী। বিদায় বেলায় অফিসার্স ক্লাবসহ নানা প্রতিষ্ঠান দিয়েছে বিদায়ী সংবর্ধনা। আর যেতে না যেতেই আলোচনায় পড়তে হয় সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি পাওয়া ইউএনও সালেহীন তানভীর গাজীকে। নবীনগর উপজেলায় দায়িত্ব নিয়ে আসার পর মাত্র নয় (৯) মাসে ঘটিয়েছেন নানা দৃষ্টান্তমূলক ও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মতো কিছু ঘটনা। দৃষ্টান্তমূলক ঘটনার মধ্যে নবীনগর শহরকে পরিচ্ছন্ন ও যানজট মুক্ত করতে নিয়েছেন পদক্ষেপ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে করতে চেয়েছেন নবীনগর শহর থেকে ভিক্ষা বৃত্তি বন্ধ, ভিক্ষুকদের দিয়েছেন ওজন মাপার যন্ত্র, যার মাধ্যমে ভিক্ষুকরা ভিক্ষা না করে বিনিময়ের দ্বারা অর্থ উপার্জন করবে, নবীনগর উপজেলাকে সারা দেশে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে উপজেলার সকল ঔষধের দোকান (ফার্মেসী) মালিক নিয়ে করেছেন স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সেমিনার, যার মূল উদ্দেশ্যে ছিল রেজিষ্টার্ডকৃত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ। এই ধরণের নানা ঘটনা।

অপরদিকে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মতোও করেছেন কিছু ঘটনা । নবীনগরে থাকাকালীন নয়মাস তিনি কিছু মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছেন, যে সব ঘটনা এখন মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। শনিবার নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্মচারি ও ডাক্তারগণের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র স্থানীয় সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদলের কাছে জমা দেয়া হয়। ওই অভিযোগ পত্রে হাসপাতালের ডাক্তার মো: সায়েমুল হুদা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালেহীন তানভীর গাজীর বিভিন্ন অমানবিক অপকর্মের দৃশ্য ফুটে উঠে। ওই অভিযোগপত্রে লেখা হয় গত ২০ জানুয়ারি হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় মো: মারজান চৌধুরীকে কর্তব্যরত অবস্থায় ডা: সায়েমুল হুদার নির্দেশে বিদায়ী নির্বাহী অফিসার সালেহীন তানভীর গাজীর কার্য্যালয়ে ডেকে পাঠান। সেখানে ওয়ার্ডবয় মারজানকে ডাক্তার সায়েমুল হুদা ও ইউএনও সম্পূর্ন আইন বর্হিভুতভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পুরো ঘটনা শুনে উপস্থিত শতাধিক মানুষের সামনে এ অমানবিক ঘটনাসহ নানা ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ডাক্তার সায়েমুল হুদাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলি হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন স্থানীয় সাংসদ।

অপর এক ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী ইউএনও সালেহীন তানভীর গাজী স্থানীয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সাংস্কৃতিক কর্মী আব্বাস উদ্দিন হেলাল নামের এক যুবককে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৪ জানুয়ারি বিদায়ী ইউএনও সালেহীন তানভীর গাজী তার নিজ কার্য্যালয়ে ডেকে নিয়ে জুতা দিয়ে পিটিয়ে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেন। তারপর এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ওই সংস্কৃতি কর্মীকে হুমকি প্রদান করেন। শনিবার এ ঘটনা জানা জানি হলে উপজেলার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এ বিষয়ে এক মানবন্ধন কর্মসূচির ডাক দিলে স্থানীয় সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল নিজে এর বিচার করবেন বলে আশ্বাস দেন। পরে শনিবার আব্বাস উদ্দিন হেলাল সহ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাদের নিয়ে স্থানীয় এমপি উপজেলার ডাক বাংলোতে এক দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেখানে সাংসদ সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত থেকে নির্যাতিত হেলালের মুখ থেকে ঘটনা শোনার পর আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে এ ঘটনায় জড়িত ইউএনও’র অফিস সহকারি মো: মিজানুর রহমানকে সাংসদ ফয়জুর রহমান স্থানীয় ডাক বাংলোতে ডেকে পাঠান। সেখানে অফিস সহকারি মিজানুর রহমানকে আব্বাস উদ্দিন হেলালকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছনা করার ঘটনায় জড়িত থাকার কারনে দুঃখ্য প্রকাশ করে নবীনগর থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়।

মিজানুর রহমান ডাক বাংলো থেকে যাওয়ার পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনসাধারণের রোষানলে পড়েন । অফিস সহকারি মিজানুর রহমানের উপর হামলার ঘটনায় শনিবার রাতে স্থানীয় ৪ আওয়ামী লীগ নেতাকে ভ্রাম্যমান আদালতে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও সালেহীন তানভীর গাজী আরেক মুক্তিযুদ্ধার সন্তান ও স্থানীয় পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: কাউছার আলম শিবুকে গত দু’মাস আগে এক ভূমি কর্মকর্তার সাথে খারাপ আচরণের কারণে বাজারের উপজেলা পরিষদ রোডে লোকজনের সামনে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে তিন মাসের সাজা প্রদান করেন।

এ বিষয়ে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালেহীন তানভীর গাজী তার বিরোদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কর্তব্যরত অবস্থায় বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করায় তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সে জন্য তাদের এইসব মিথ্যা অভিযোগ। তাছাড়া আব্বাস উদ্দিন হেলাল কে আমি চিকিৎসার জন্য ২০ জানুয়ারী আর্থিক ভাবে বিশ হাজার টাকা সহযোগীতা প্রদান করেছি। ২৪ জানুয়ারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোষ্টের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মাত্র। এটা কিভাবে লাঞ্ছনার শামিল হয়। আমি নবীনগরে থাকা অবস্থায় সততার সহিত কাজ করেছি। হয়তো এটাই আমার অপরাধ।

আর পড়তে পারেন