শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লা চিড়িয়াখানায় এসে হতাশ দর্শনার্থীরা

আজকের কুমিল্লা ডট কম :
এপ্রিল ১২, ২০১৯
news-image

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ
দর্শনার্থীদের আনাগোনায় একসময় কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ছিল বেশ সরগরম। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সেসব এখন স্মৃতি। কারণ বর্তমানে প্রায় পশু-পাখি শূন্য এই চিড়িয়াখানায় এসে দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরছেন। সব মিলিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এটি।

জানা যায়, পানি ও খাবারের অভাব আর কুমিল্লা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় গত বছর ‘যুবরাজ’ নামের সিংহটি মারা যায়। ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারজনিত রোগে আক্রান্ত ছিল পশুটি। এরপর সেখানে দেখার মতো ছিল কেবল দুটি হরিণ। কয়েকদিন না যেতেই খাঁচায় ঢুকে সেগুলো মেরে ফেলেছে কুকুর।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিংহ ও হরিণের খাঁচাগুলো খালি পড়ে আছে। বিশাল আকারের বিভিন্ন প্রজাতির পাখির খাঁচাসহ চিড়িয়াখানায় আরও একাধিক পশু-পাখির খাঁচা এখন শূন্য।

চিতা বাঘের বাচ্চা
সিংহ ও হরিণ মারা যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ মেছো বাঘ ও চিতা বাঘের দুটি বাচ্চা সংযুক্ত করেছে চিড়িয়াখানায়। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেলো, বাঘ দুটি পৃথক দুটি শুকনো খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে। রোদে-গরমে একাকার হয়ে একটু ছায়ার আশায় কাতর তারা। এই মেছো বাঘ ও চিতা বাঘের জন্য খাঁচার ভেতর সবসময় পানির হাউজের ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক হলেও আদতে তা নেই। স্থানীয় কয়েকজন কিশোর ও তরুণ জানায়, এই পশু দুটিকে সময়মতো খাওয়াও দেওয়া হয় না।

কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ভৌমিকের দাবি, ‘সিংহ ও হরিণ মারা যাওয়ার পর জেলা পরিষদের অর্থ দিয়ে মেছো বাঘ ও চিতা বাঘের দুটি বাচ্চা চিড়িয়াখানায় আনা হয়েছে। তাদের শুকনো খাঁচায় পানির হাউজ বসানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে সিংহের খাঁচায় বাঘ দুটিকে একসঙ্গে রেখে পানির ব্যবস্থা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।’

চিড়িয়াখানার অন্য পশু-পাখির মধ্যে রয়েছে সোনালি বানর, হনুমান, গন্ধকুল, ধনেশ পাখি, কলেম পাখি, টার্কি মোরগসহ দুটি অজগর সাপ। বাচ্চা বাঘগুলোর খাঁচার মতো বানর ও সাপসহ সব পশুপাখির খাঁচায় একই দুরবস্থা।

খাঁচায় চিতবাঘ দেখছে শিশু-কিশোররা
ইজারা নেওয়া চিড়িয়াখানার পরিচালক আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এর আগে মো. মাসুদ নামে এক ব্যক্তি চিড়িয়াখানাটি ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছিলেন। ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি গত মাসের প্রথম সপ্তাহে তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে কুমিল্লা জেলা পরিষদ। চিড়িয়াখানার পাশের বোটানিক্যাল গার্ডেনও এর আওতাভুক্ত। গার্ডেনের সীমানায় প্রাচীর নির্মাণ, চিড়িয়াখানাকে পশু-পাখিতে সমৃদ্ধ করাসহ উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছে জেলা পরিষদ।

তবে স্থানীয় বাসিন্দা ঋষি দাস ও সাইফুল ইসলাম অন্তরের অভিযোগ, জেলা পরিষদ এর আগেও বহুবার ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা লাভ করলেও চিড়িয়াখানার চাহিদা অনুযায়ী পশু-পাখি দেয়নি, দৃশ্যমান কোনও উন্নয়ন নেই। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদারদের অবহেলায় দর্শনার্থীরা বিমুখ হচ্ছে। তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কয়েক বছর ধরে দিন দিন পশু-পাখি শূন্য হয়ে পড়ায় এই চিড়িয়াখানার অবস্থা বেহাল।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘কুমিল্লা চিড়িয়াখানা সরকারের দেওয়া কোনও চিড়িয়াখানা নয়। এটি কুমিল্লা জেলা পরিষদের জায়গায় ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রতি বছর জেলা পরিষদের ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। চিড়িয়াখানা ও পশু-পাখিদের জন্য সরকারের কোনও বরাদ্দ নেই।’

আর পড়তে পারেন