বুধবার, ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আঠারো বছরে জঙ্গি মামলায় গ্রেফতার সাড়ে তিন হাজার

আজকের কুমিল্লা ডট কম :
এপ্রিল ২৯, ২০১৭
news-image

 

ডেস্ক রিপোর্টঃ

সারাদেশে গত ১৮ বছরে জঙ্গি মামলায় গ্রেফতার হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার আসামি। মামলা হয়েছে ৮৫১টি। বিচার সম্পন্ন হয়েছে ১১৯টি। এরমধ্যে দুইটি মামলায় হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইসহ ১০ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। অপর দিকে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ ও আত্মঘাতী বোমা হামলায় নারী এবং শিশুসহ নিহত হয়েছে ৮১ জন। পুলিশ সদর দফতরে ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপস্থাপিত রিপোর্ট থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি কবি শামসুর রাহমানকে হত্যার চেষ্টার মধ্যে দিয়ে দেশে জঙ্গি হামলার সূচনা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয় চার জঙ্গি।
এ দিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার পরও থেমে নেই জঙ্গি তৎপরতা। পলাতক জঙ্গিরাই সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। তাদের মধ্যে কেউ জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে, কেউ আবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউ দলকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখছে, কেউ হয়ে উঠছে আগের চেয়েও দুর্ধর্ষ। তাদের মধ্যে অনেকে আবার দেশের বাইরে গিয়ে সংগঠন পরিচালনা, অর্থায়নসহ নানা দিক থেকে ভূমিকা রাখছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ সদর দফতর। কারাগারে পাঠানো জঙ্গিদের জামিন এবং জামিনে থেকে আবারও জঙ্গিবাদে জড়ানোর বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তাই জঙ্গিদের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত, দেওয়া হচ্ছে নির্দেশনা। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার সারাদেশে পুলিশের মহানগর কমিশনার, ডিআইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে। এতে জরুরি ভিত্তিতে জঙ্গিদের তথ্য হালনাগাদ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ১৯৯৯ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত জঙ্গি ঘটনায় মামলার সংখ্যা ৮৫০টি। তবে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় আরও একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত জঙ্গি ঘটনায় মামলার সংখ্যা ৮৫১টি। এসব  মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৭ জন। এসব মামলার মধ্যে বিচার সম্পন্ন হয়েছে ১১৯টি। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬১৯টি।
জঙ্গি ঘটনায় সর্বাধিক মামলা হয়েছে ডিএমপিকে ৩৪১টি, আসামির সংখ্যা ৮০৬ জন। ঢাকা রেঞ্জ মামলার সংখ্যা ১০টি, আসামি ৩১১ জন। রাজশাহী রেঞ্জে মামলা ১০১টি, আসামি ৩৬৭ জন। সিআইডির মামলার সংখ্যা ১৬টি, আসামি ১৪২ জন। সিএমপি মামলার সংখ্যা ৪৪টি, আসামি ২৩৬ জন। কেএমপি মামলার সংখ্যা ৩টি, আসামি ২৮ জন। আরএমপি মামলার সংখ্যা ৭টি, আসামি ৪৫ জন। বিএমপি মামলা ১৪, গ্রেফতার ১৭৬ জন। চট্টগ্রাম রেঞ্জ মামলা ৪৭, আসামি ২৩৪ জন। খুলনা রেঞ্জ মামলা ৪২, আসামি ১৮৬ জন। বরিশাল রেঞ্জ মামলা ১২, আসামি ৭২ জন। সিলেট রেঞ্জ মামলা ১৮, আসামি ৭১ জন। রংপুর রেঞ্জ মামলা ৩১, আসামি ২১৫ জন। রেলওয়ে রেঞ্জ মামলা ৭, আসামি ১৭ জন। ময়মনসিংহ মামলা ৪৪, আসামি ১৬৫ জন।
জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে নিহত হন দুই বিচারক সাহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে। এ মামলায় আদালত ২০০৬ সালের ২৯ মে ৭ জঙ্গিকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এদের মধ্যে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ৬ জন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তারা হলেন- জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, শায়খের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন ও খালেদ সাইফুল্লাহ (ফারুক)। একই মামলার অপর আসামি জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৬ সালে ১৬ অক্টোবর ।
অপর দিকে, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় গত ১২ এপ্রিল ফাঁসি কার্যকর হয় শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান, তার দুই সহযোগী শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনের।
২০১৩ সাল থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ২২ জন জঙ্গি। অপর দিকে, র‌্যাব পুলিশের অভিযানের সময় গোলাগুলি ও আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ৫ শিশু এবং নারীসহ ৬৯ জন। এরমধ্যে সর্বাধিক ছিল রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত হয় ১১ জঙ্গি। এছাড়া জঙ্গি অভিযানের সময় জঙ্গিদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেডে নিহত হন র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৭ জন।

আর পড়তে পারেন